শরৎ পূর্ণিমা উপলক্ষ ধরে পার্বত্য ভ্রমণে এবারের গল্প মেঘ রাজ্য সাজেক ভ্যালীতে। সাজেক ভ্যালী যাত্রার রোমাঞ্চটা শুরু হয় খাগড়াছড়ি সকালের নাস্তা করে চাঁদের গাড়ীতে চড়ার পর থেকে৷ পূর্বের রাতে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাত্রা মোটমুটি সাদামাটাই ছিলো।
যাত্রা পথের পাহাড় ডিঙ্গানোর ভাবনা নিয়ে যখন চাঁদের গাড়ীতে বসলাম তখন পূর্বের রাতের বাস যাত্রার ক্লান্তি উধাও হলো । অবশ্য নাস্তার পূর্বে হোটেল রুমে ১ ঘন্টার ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ ক্লান্তি দূর হওয়ার সহায়ক হয়েছে যা আমার সাজেক ভ্যালীর সব ট্যুরেই কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে থাকে৷
বাঘাইছড়ির আর্মী স্কটের পর যখন পাহাড়ি পথে দুপাশের সবুজ ভেদ করে চলছি ঠিক তখন শরৎ আকাশ সৌন্দর্য ছড়িয়েছে অকৃপণ ভাবে। স্বচ্ছ নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘ ভাসে তার মাঝে আবার বৃষ্টি কালো মেঘের নকশা ৷ আকাশে মেঘ নকশা আর পাহাড়ের বুকে সর্পিল পথের দুপাশে সবুজের শোভা। মাঝে মধ্যে উপজাতির ঘরের সামনে আদিবাসী শিশুর হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানানো অনেকের কন্ঠে গান আনার কারণ হতে পারে।
পুরো পথই সোনা রোদ্দুর নিয়ে একের পর এক সবুজ ডিঙিয়ে স্বপ্ন চুড়া সাজেক ভ্যালী পৌঁছেছি। তারপর যার যার পূর্ব নির্ধারিত রিসোর্টের রুমে ফ্রেশ হয়ে পাহাড়ি হাতের রান্না করা দুপুরের খাবার খেতে চললাম। পাহাড়ি খাবার ব্যাম্বো চিকেন সহ কয়েক প্রকার সুস্বাদু খাবার দিয়ে খাবার শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পাহাড়ের উপর পাহাড় কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্যে৷
বেশ কিছুটা ট্রাকিং শেষে যখন সাজেকের সর্বোচ্চ চুড়ায় আমরা তখন নীল আকাশে তুলো সাদা মেঘ ছড়ানো। হেলে পড়া সূর্য থেকে নরম রোদ্দুর তার সাথে শীতল আরাম বাতাস ট্রাকিং এর ক্লান্তিকে পরাজিত করে আনন্দ সুখ অনুভূতি দিলো ৷ চার পাশে সবুজ দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টির স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা না জনালে অন্যায়ই হবে৷ আদিবাসীর হাতে বানানো চা খেয়ে এবং ভালো লাগার কিছু সময় পার করে নিভু আলোয় ফিরতি পথ ধরে সন্ধার পর আসলাম হেলি প্যাডে৷
হেলি প্যাডে আড্ডা চলছে সাথে আছে বাঁশের পেয়ালায় তেতুল চা আর অপেক্ষায় আছি পূব আকাশের পূর্ণ যৌবনা চন্দ্রমার। পূব পাহাড়ের বুক চিরে চাঁদের দেখা যখন পেলাম আকাশে তখন মেঘের খেলা। ধীরে জোৎস্মা আলো ছড়িয়েছে পাহাড়ের বুকে তখন আবার ঘন কালো মেঘ এসে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে। তাই দেরী না করে পাহাড় ঢালে গড়ে উঠা রিসোর্টে ফিরে বৃষ্টি সৌন্দর্য উপভোগের অপেক্ষায় রইলাম। এর মধ্যে রাতের খাবার শেষ করে সবাই রইলাম চিলে কোঠায় এবং গানের আসরের মাঝেই ঝুম বৃষ্টি। গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি সৌন্দর্য উপভোগ করে ঘুমাতে গেলাম নতুন আলোর অপেক্ষায়।
ঘুম থেকে উঠেই চমক সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই কারণ মেঘ কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা আমাদের চারপাশ। পাহাড়ের খাঁজে আটকে থাকা তুলো সাদা মেঘ এবং শীতল বাতাসে ভেসে আসা মেঘের ছোঁয়ায় স্পষ্ট সবাই ভালোলাগার শিহরণে। সময়ের সাথে সূর্যালোক যখন স্পষ্ট সকালের খাবার খাওয়ার সময় তখন। খাবার খেয়ে গোছগাছ করে আমাদের নির্ধারিত চাঁদের গাড়ীতে সৌন্দর্য ফেলে রেখে সৌন্দর্যের মাঝে পাহাড়ি পথেই ফিরে চললাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে।
খাগড়াছড়ি পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে চললাম আলুটিলা গুহায়। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে ঝিরি জলের মধ্যে মশাল জ্বালিয়ে গুহায় প্রবেশ করলাম। ভয় রোমাঞ্চ নিয়ে সবাই সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছি অপর প্রান্তের আলোর খোঁজে। মশালের নিভু আলোয় নিরেট কালো পাথর গুহায় পিচ্ছিল পথ পার হয়ে আলোর দেখা পেয়ে সবার মুখে হাসি ফুটলো। সিড়ি বেয়ে উপরে এসে কিছুক্ষণ ফটোসেশান করে চললাম পাহাড়ের উপর নির্মিত জেলা পরিষদ পার্কে৷ পরন্ত বিকেল ঝুলন্ত ব্রিজ পাহাড় চুড়া এবং পাহাড় খাজের লেকের পাড়ে উপভোগ্য সময় পার করে ক্লান্তি নিয়ে ফিরে আসলাম খাগড়াছড়ি শহরে। হোটেল রুমে ফ্রেশ হয়ে আবার কেউ কিছুক্ষণ শহরে বেড়িয়ে রাতের খাবার খেলাম এবং রাতের গাড়ীতেই ফিরে আসলাম যান্ত্রিক শহরে৷